পিছিয়ে পড়া ৬ অঞ্চলের মানুষের জন্য নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সেবা নিশ্চিতকরণে সম্প্রতি উদ্বোধন হলো ‘এনহ্যান্সিং গভর্নেন্স অ্যান্ড ক্যাপাসিটি অব সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যান্ড সিভিল সোসাইটি ইন ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যানিটেশন সেক্টর’ প্রকল্পের কার্যক্রম। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ও সুশীল সমাজের দক্ষতা উন্নয়ন ও সমন্বয়ের মাধ্যমে সুশাসন ও জবাবদিহিতার পরিবেশ সৃষ্টি করে উপকূল, খরাপ্রবণ, চর, হাওর, বন্যাপ্রবণ এবং পাহাড়ি অঞ্চলের ২ লাখ দরিদ্র, অবহেলিত এবং বঞ্চিত পরিবারের জন্য নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন (ওয়াস) সেবা নিশ্চিতকরণ এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তায় এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথ দেশের ২৫টি জেলা, ২৭টি উপজেলার ৫৯টি দুর্গম ও পিছিয়ে পড়া ইউনিয়নে ৪ বছর মেয়াদি ৪৫ কোটি টাকা বাজেটের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও হেড অব ডেলিগেশন, উইলিয়াম হানা প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত জাতীয় পানি ও স্যানিটেশন কৌশলপত্র : দুর্গম ও পিছিয়ে পড়া অঞ্চল ২০১১-কে ভিত্তি ধরে এই প্রকল্পটির কার্যক্রম সাজানো হয়েছে। বাংলাদেশে সার্বিক ওয়াস ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি সত্ত্বেও প্রকল্পাধীন দুর্গম ও পিছিয়ে পড়া অঞ্চলগুলোর দরিদ্র জনগোষ্ঠী এখনও নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন অধিকার থেকে বঞ্চিত। সুশাসন ও জবাবদিহিতার অভাব, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ও সুশীল সমাজের অদক্ষতা ও সমন্বয়হীনতা, পানি ও স্যানিটেশন অধিকার বিষয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অসচেতনতা এসব অঞ্চলে দুর্বল ওয়াস অবস্থার পেছনে অন্যতম কারণ। প্রকল্পটি সুশাসন ও জবাবদিহিতাভিত্তিক পানি ও স্যানিটেশন সেবা নিশ্চিতকরণে স্থানীয় সরকার ও সুশীল সমাজের দক্ষতা ও সমন্বয় বৃদ্ধি; দরিদ্র ও অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জন্য ওয়াস সুবিধা নিশ্চিত করার মাধ্যমে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ কমানো এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, সেবাপ্রদানকারী এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের যথাযথভাবে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে পরিচালনা করা হবে। এছাড়াও এটিতে দারিদ্র্য বিমোচন ও নারীর ক্ষমতায়নে সহায়তা, ওয়াস ব্যবস্থার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হ্রাস, স্বাস্থ্য অভ্যাস উন্নয়ন, আর্সেনিকোসিস রোগীদের কর্মসংস্থান ইত্যাদি বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং এলাকা উপযোগী পানি ও স্যানিটেশন প্রযুক্তি স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা মত প্রকাশ করে বলেন, ঢাকা শহরে বসবাসকারী মানুষের জন্য পানি ও স্যানিটেশন খাতে জনপ্রতি বরাদ্দ ৯০০ টাকা। অথচ চরবাসীর জন্য জনপ্রতি ১১ এবং পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জন্য ২২ টাকা, উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জন্য ২০০ টাকা বরাদ্দ। বিদ্যমান এই বৈষম্য পানি ও স্যানিটেশন সেক্টরের উন্নয়ন বিশেষত দুর্গম ও পিছিয়েপড়া অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর এই অধিকার প্রতিষ্ঠায় অন্যতম বাধা। উইলিয়াম হানা বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যে সব উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করছে সেগুলোর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সুশাসন, যা নতুন এই প্রকল্পটিরও মূল কেন্দ্রবিন্দু। দেশে ওয়াস সেক্টরের বরাদ্দ ও সেবাব্যবস্থা অপর্যাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও দুর্গম ও পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে যেন এই সেবা পৌঁছানো যায় তা নিশ্চিত করাই এই প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য। ইইউ তাদের কাজে ৩টি বিষয়ের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে থাকেÑ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গৃহীত পদক্ষেপ, দেশের মধ্যে সরকারের অঙ্গীকার ও সরকারি-বেসরকারি গৃহীত পদক্ষেপ এবং স্থানীয় পর্যায়ে চাহিদাভিত্তিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থপনা। এনজিও ফোরামের নির্বাহী পরিচালক এসএমএ রশীদ নতুন প্রকল্পটিকে সময় উপযোগী হিসেবে অভিহিত করে বলেন, ওয়াস সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রকল্পের অধীনে পরিচালিত কার্যক্রমগুলো থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা জাতীয় পর্যায়ের স্টেকহোল্ডারদের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে এবং জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় এগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করতে তাদের উদ্বুদ্ধ করা হবে। এনজিও ফোরামের নির্বাহী কমিটির সভাপতি তাহেরুন্নেসা আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার নুরুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ আবু তাহের খান। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ওয়াটারএইড ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ ড. খায়রুল ইসলাম, এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথের নির্বাহী পরিচালক এসএমএ রশীদ প্রমুখ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত উপস্থাপনা করেন যোসেফ হালদার, প্রধান, অ্যাডভোকেসি ও তথ্য, এনজিও ফোরাম।
মানুষের সুস্বাস্থ্যের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন খুবই জরুরি। দেশের মানুষের আর্থিক অবস্থার সাথে মিল রেখে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করা সরকারের একটি প্রধান লক্ষ্য। স্যানিটেশন হল প্রাণীর মলমূত্র, ময়লা পানি এবং আবর্জনা পরিস্কার করার সঠিক উপায়। স্যানিটেশন ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের কিছু বিশেষ দায়িত্ব ও কর্মসূচি রয়েছে। নির্ধারিত নিয়ম মেনে যে কোন নাগরিক ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এই সেবা ভোগ করতে পারেন।
কর্মসূচির উদ্দেশ্য
ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রাপ্ত সেবা ও অধিকার
সচরাচর জিজ্ঞাসা
প্রশ্ন ১:স্যানিটেশন কি?
উত্তর: স্যানিটেশন হল প্রাণীর মলমূত্র, ময়লা পানি এবং আবর্জনা পরিস্কার করার সঠিক উপায়।
প্রশ্ন ২: স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনায় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে কে দায়িত্ব পালন করে?
উত্তর: স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনায় ইউনিয়ন পরিষদের পল্লী পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন স্ট্যান্ডিং কমিটি দায়িত্ব পালন করে
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস